আজ ৩ ডিসেম্বর বেনাপোল মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিন মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে বেনাপোল, শার্শা এলাকা ছেড়ে পিছু হটতে থাকে পাকিস্তান বাহিনী এবং তাদের দোসররা। আশ্রয় নেয় শার্শার আমড়াখালি সদর ও পরের দিন আঞ্চলিক সদর দপ্তর নাভারণে।
এর আগে ডিসেম্বর ২ তারিখ রাতে বেনাপোল বাজার থেকে আড়াই কিলোমিটার উত্তর পশ্চিম পাশে রঘুনাথপুর গ্রাম ছেড়ে পালায় পাকিস্তান বাহিনী এবং তাদের দোসররা। আশ্রয় নেয় প্রায় তিন কিলোমিটার পূর্বে পোড়াবাড়ী নারাণপুর মাঠপাড়ার ব্যাটালিয়ন সদরে। ৩ ডিসেম্বর দুপুরের দিকে দুপক্ষের তুমুল সম্মুখযুদ্ধে ও মুহুর্মুহু কামানের গুলিতে তছনছ হয়ে যায় নারানপুরে পাকিস্তান সেনাদের চৌকি।
মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে আগের দিন পাকিস্তান সেনারা রঘুনাথপুর ইপিআর ক্যাম্প ছেড়ে রাতের আঁধারে পালিয়ে বাঁচে। পাকিস্তান সেনাদের পিছু হটার খবর পেয়ে বেনাপোলের ওপারে ভারতের বনগাঁর জয়ন্তিপুর থেকে সোজা রঘুনাথপুরের পাশের গ্রাম মানিকিয়ায় ছুটে আসেন মিত্র বাহিনীর ক্যাপ্টেন মি. রায়সহ দুদেশের ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা।
তাদের নির্দেশে ৩ ডিসেম্বর দুপুরের দিকে দুজন মুক্তিযোদ্ধা চারটি গ্রেনেড নিয়ে রেকি করতে যায় নারানপুর ব্যাটালিয়নের আশপাশে। ক্ষুধায় কাতর মুক্তিযোদ্ধাদের ঘরে ডেকে নিয়ে ইউসুফ নামের এক লোক পেটপুরে খেতে দেয় দুধ মুড়কি আর চিড়ে। খাওয়া শেষে ঘর থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তান বাহিনী তাদের ঘিরে ফেলে।
জীবন নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাশের কোদলা নদীতে। মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ্য করে পাকিস্তান বাহিনী বৃষ্টির মতো ছুড়তে থাকে গুলি। খবর চলে যায় দুই কিলোমিটার দূরে তিন প্ল্যাটুন সেনা নিয়ে মানিকিয়া গ্রামে অবস্থানরত মিত্র বাহিনীর কমান্ডার মি. রায়ের নিকট। বেনাপোলের ওপারে জয়ন্তিপুরে তখন ৫নং সেক্টরের সাব সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্বে বর্তমান জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী।
সেদিন শুরু হয় প্রবল প্রতিরোধ যুদ্ধ। প্রবল প্রতিরোধে ভীত সন্ত্রস্থ পাকিস্তান বাহিনী পুটখালি, শিকড়ি বটতলা, বেনাপোল কাস্টমস হাউহ এলাকা ছেড়ে পিছু হটে আশ্রয় নেয় যশোর বেনাপোল সড়কের আমড়াখালি কোম্পানির সদর দপ্তরে। এভাবেই শত্রুমুক্ত হয় বন্দর নগরী বেনাপোল। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে মুক্তির আনন্দে উচ্ছ্বসিত মুক্তিযোদ্ধা-জনতার ঢল নামে বেনাপোলে। পাড়া-মহল্লায়ও চলে খণ্ড খণ্ড আনন্দ মিছিল। মুক্তির আনন্দে ফেটে পড়ে গোটা বেনাপোলের মানুষ।
মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় চলতে থাকে একের পর এক অপারেশন। ৪ ডিসেম্বর শার্শা ও নাভারন এবং ৫ ডিসেম্বর ঝিকরগাছা দখলমুক্ত হয়। আর ৬ ডিসেম্বর মুক্ত হয় যশোর জেলা। এদিন পাকিস্তান সেনারা ঝিকরগাছা ছেড়ে আশ্রয় নেয় খুলনার শিরোমনি ক্যাম্পে।
এভাবেই ৩ ডিসেম্বর বেনাপোল এবং ৫ ডিসেম্বর ঝিকরগাছা এলাকা দখলদার পাকিস্তান বাহিনীর কাছ থেকে স্বাধীন হবার গল্প শোনান স্থানীয় দুর্গাপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা দীন মোহাম্মদ ওরফে দীনো এবং বেনাপোল মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শাহ আলম।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।